এক সময় গাইবান্ধার সাতটি উপজেলার গ্রাম, পাড়া, মহল্লার জীবনে কুয়া ও ইন্দিরা ছিল অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখন সেগুলো কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এক টুকরো গ্রামীণ ঐতিহ্য।
৯০-এর দশকে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ী, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিটি পরিবারের প্রয়োজনীয় পানি আসত এই কুয়া থেকেই। সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে হাঁড়ি, কলস, বালতি হাতে গ্রাম্য নারীরা ভিড় করতেন কুয়ার ধারে। ঠান্ডা পানিতে ধোয়া-মোছা, রান্না, গোসল—সব কিছুই চলত এই কুয়া থেকেই।
কুয়া ছিল শুধু পানির উৎস নয়, ছিল সামাজিক মিলনক্ষেত্রও। সকালে সেখানে জমত গ্রামের গল্পগুজব, হাসি-মজার আড্ডা। কারো কুয়া নষ্ট হলে বা বালতি পড়ে গেলে সবাই মিলে সেটি তুলতে যেত—একটা পারস্পরিক সহযোগিতা ছিল এই কুয়ার চারপাশে।
আজকের আধুনিক যুগে টিউবওয়েল, গভীর নলকূপ ও মোটরের জগতে সেই কুয়ার আর প্রয়োজন নেই। নতুন প্রজন্মের কাছে ‘কুয়া’ শব্দটাই এখন অপরিচিত। তারা এটিকে কেবল গল্পের বিষয় বলে মনে করে।
এখন কুয়া ও ইন্দিরা কেবল ছবিতে বা গল্পে টিকে আছে। অথচ এগুলো ছিল গ্রামের সংস্কৃতি, ঐক্য ও সৌন্দর্যের প্রতীক। স্থানীয়রা মনে করেন, কুয়া ও ইন্দিরাকে শুধু পানির উৎস নয়, ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি।